Sunday 30 December 2018

ভালোবাসার অস্তিত্ব বিশ্বাসের উপর ( a sad love story in bengali )

Leave a Comment
আমি আপনাদের কাছে একটা বেদনা ভরা ভালোবাসার গল্প লিখলাম । যদি ভালো লাগে তাহলে লাইক এবং ফলো করতে ভুলবেন না ।

          ভালোবাসার অস্তিত্ব বিশ্বাসের উপর 
     ( a sad  love story in bengali )


নীলাকে অপারেশন থ্রিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো।
আমি বাইরে বসে আছি। চোখের জল বেয়ে পড়ছে আপন মনে।
বুকে পড়ছে ইট ভাঙ্গার আঘাত।
চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে সবকিছু!!
পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
মনে পড়ছে নানান কথা।
-এই আপনি বিছানায় বসেছেন কেন? উঠুন এখনি না হলে কিন্তু চেঁচামেচি করবো।
-কথাটা শুনেই চুমকে উঠলাম।
নিজের বিয়ে করা বউয়ের পাশে বসবো না তো কার সাথে বসবো? অবাক হয়ে কথাটা বললাম।
-আমি আপনার বউ না আর আপনার সাথে আমার বিয়েও হয় নি।
-কথাটা শুনে নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছে না। বাসর রাতে যদি এমন কথা শুনা হয় তাইলে কি নিজের কানকে বিশ্বাস করা যায়?
-মানে? অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে বললাম।
মেয়েটি অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো! একটু পর চোখটা নিচের দিকে নামিয়ে বললো...
-আপনি বিয়ে করেছেন আমার চাচাতো বোন নীলাকে।
-মানে কি বলছেন এসব?
-হ্যাঁ ঠিকই বলছি।
-তাইলে আপনি এখানে কেন? আর আপনি কে?
-আমার নাম তারিন, আর বোনটা দেখতে ভালো না!! তাই ওর জায়গায় আমাকে বসে দিয়েছিলো।
বিয়ের রেজিস্টার থেকে শুরু করে কবুল পযর্ন্ত আমার বোন বলেছে!!! আমি শুধু বউ সেজে বসে ছিলাম। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
-বিষয় টা কি ভেবে মনে নিবো? আসলেই কি এটা মেনে নেওয়ার মত? কিছুই বুঝতে পারছি না। দেখলাম পাশের মেয়েটা কান্না করছে।
কোন কিছু না ভেবেই বললাম...
-চলুন
-কোথায়?(কান্নার কণ্ঠে অবাক হয়ে বললো)।ম
আপনার বাসায় আর আমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে তাকে নিয়ে আসবো। দেরি করা যাবে না কেউ জানার আগেই সব করতে হবে। মেয়েটা কোন কথা না বলেই আমার সাথে চলে আসলো।
বাইক নিয়ে রওনা দিলাম।
উদ্দেশ্য শশুর বাড়ি।
গিয়েই দেখলাম সবাই গোল হয়ে বসে আছে। আর মাঝখানে একটা মেয়ে কান্না করছে।
তোর জন্য যদি আমার মেয়ের কোন সর্বনাশ হয় তাইলে তোরে আমি ছাড়বো না।। মাঝখানে বসে থাকা মেয়েটার উদ্দেশ্য করে কেউ একজন বললো।
মনে হলো এটাই তারিনের মা।
নানা জনে নানান কথা বলছে মেয়েটাকে! মেয়েটা চুপ করে আছে সাথে আরেকজন মধ্যবয়স্ক মহিলা।
তারিন কে নিয়ে গেলাম ওদের কাছে। সবাই আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো।
অনেকটাই অবাক সবাই।
তা তো হবারই এতো বড় একটা ঘটনার পর।
সবার ভিড় ঠেলে ওই মধ্যবয়স্ক মহিলাটা আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
এটাই আমার শাশুরি এতে কোন সন্দেহ নাই। মাঝখানে যে মেয়েটা বসে আছে ওটা আমার বউ।
এসেই হাত ধরে কাঁদতে লাগলো। বাবা আমার বাপ মরা মেয়েটাকে তুমি মেনে নেও। তোমার বাড়ির কাজের মেয়ের মত করে রেখো। যত ইচ্ছা কষ্ট দিও, তবুও ওকে নিয়ে যাও বাবা। না হলে, ওর গলায় দড়ি নেওয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না।
বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
নিজের চোখেও পানির ছোয়া পেলাম।
কোন কথা না বলেই মাকে সালাম করে নীলাকে নিয়ে আসলাম। রুমে ডুকেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো...
আমাকে প্লিজ ছেড়ে দিবেন না! আমি আপনাদের বাসার সব কাজ করে দিবো, আপনার সব কাজ করবো, দরকার হলে আমি মেঝেতে সুয়ে থাকবো, একবেলা খাবো আরেক বেলা না খেয়ে থাকবো। কাজের মেয়ে মনে করে রেখে দিন আমাকে, দয়া করে ছেড়ে দিবেন না।
মেয়েটার কান্না দেখে নিজের চোখেও পানির ছোয়া পেলাম বুঝলাম নিজেও কাঁদছি।
হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো...
আমাকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হবে না আমাকে শুধু রেখে দিন।
কথাটা শুনেই ওকে বুকে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
কান্না কণ্ঠে বললাম...
আমার বুকে সারাজীবন থাকতে পারবে না?
কথাটা শুনে মনে হলে মেয়েটা অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে।
গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।
মুছে দিলাম না, কাদুক!
যত ইচ্ছা কাদুক আজকের পর থেকে আর কাঁদতে দিবো না। তাই আজকেই মন ভরে কাঁদুক।
আস্তে আস্তে আমার বুকে মাথাটা রাখলো।
খানিক বাদেই বুঝতে পারলাম বুকে ভেজা ভেজা অনুভব হচ্ছে।
মেয়েটা কাঁদছে নিরব কান্না।
হয়তো কষ্টের নাহ তৃপ্তির বা আনন্দের!!
বাবা মাও আমার কথাই সব মেনে নিলো।
বড্ড বেশিই ভালোবাসে আমাকে।
কোন অভিযোগ নেই, নেই কোন প্রতিবাদ।
একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখলাম,
ফুরিয়ে যাওয়া ক্রিমের প্যাকেট থেকে ক্রিম বের করার চেষ্টা করছে। অবশেষে দাঁত দিয়ে কেটে আঙ্গুল দিয়ে মুখে দিচ্ছে।
কালো মেয়েদের কি সাজতে মানা নাকি?
আমাকে দেখেই পিছনে প্যাকেটটা লুকিয়ে ফেললো।
ফ্রেস হয়ে খাওয়ার পর সুয়ে পড়লাম।
আমার বুকটাকে বালিশ বানিয়ে নীলা সুয়ে আছে।
বিছানায় ২য় কোন বালিশের স্থান হয় নি।
নীলা ঘুমাচ্ছে।
আস্তে করে মাথাটা আমার বুক থেকে সরিয়ে উঠে পড়লাম।
গিয়েই ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার টা খুললাম।
একটা ফুরিয়ে যাওয়া ক্রিমের প্যাকেট, একটা নেলপালিশ যা আগেই শুকিয়ে গেছে ! নীলা পানি দিয়ে রেখেছে যেন পরের বার কাজ চলে।
কালকের কৌটাও খালি পড়ে আছে।
বিছানায় এসে দেখি নীলা এখনো ঘুমাচ্ছে।
একটুও অভিযোগ নেই!!! নেই কোন প্রতিবাদ!!
হয়তো বলার সাহস পায় না যদি কখনো কিছু বলি তাই হবে হয়তো।
বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
নিজের ইচ্ছা মত নীলার জন্য সাজার জিনিস নিলাম।
চুপটি করে ড্রয়ারে রেখে দিলাম সাথে একটা চিরকুট... (বিকেলে রেডি থেকো বাইরে যাবো)।।
সকালে নীলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
বেরিয়ে পড়লাম, উদ্দেশ্য অফিসে।
ড্রয়ার খুলে পাগলি অবাক হবে, তারপর ইচ্ছা মত কাঁদবে।
আসলেই পাগলি একটা।
বিকেলে ঠিকই তারাতারি বাসায় আসলাম, তবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য না, হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
বারান্দায় বসে আছি। গুনছি অপেক্ষার প্রহর।
ডাক্তার বেরিয়ে আসলো! নীলাকে বেডে সুয়ে রাখা হয়েছে।
-সজীব সাহেব আপনি ওনাকে নিয়ে যেতে পারেন। ডাক্তার আমার প্রশ্নের অপেক্ষা না করেই বললো।
-কিন্তু ডাক্তার কি হইছে নীলার?
কথাটা শুনেই তার মুখটা কালো হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো,
তেমন কিছু না পেসার টা বাড়ছে তাই।।
একপা দু'পা করে নীলার বেডের কাছে গেলাম।
আমাকে দেখেই চোখের কোনা দিয়ে একফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
এই পানির অর্থ আমি বুঝি না।
সেইদিন পর থেকে নীলা আর আমার কাছে আসে না। বিছানায়ও স্থান পেয়েছে আরেকটা বালিশ।
কি ব্যাপার আরেকটা বালিশ কেন?
আরে বোঝনা কেন? আমার বেবি হলে কি আমরা এমন করেই থাকবো নাকি হু? তাই এখন থেকেই অভ্যাস করে নিচ্ছি।
কথাটা বলেই একটা হাসি দিলো, তবে সেটা শুষ্ক।
বিয়েটা হয়েছে ৬ মাস।
কিন্তু গত একমাস ধরে আগের নীলাকে আর এখনকার নীলাকে মিলাতে পারছি না।
আগে কোন কিছু না থাকার সত্ত্বেও সাজার চেষ্টা করতো, আর এখন? মনে হয় সাজার কথা ভুলেই গেছে।
হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছি।
নীলাকে O.T তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিকালে বাসায় এসে দেখি নীলা মেঝেতে পড়ে আছে।
নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।
তারপর...

আমাদের আরও সুন্দর সুন্দর গল্প ও কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন 
যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তো এখানে ক্লিক করুন

দুইঘন্টা হয়ে গেলো ভিতর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। হঠাৎ সাদা কাপড়ে একজন মেয়ে বের হলো।
চেনা চেনা লাগছে, হুমমম কাছে আসতেই বুঝলাম তারিন।
দুলাভাই আপুর অবস্থা ভালো না। তারাতারি বড় কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
কথাটা যেন বুকে তীরের মত বিধলো।
হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বললাম...
-কি হইছে?
-আসলে....
-কি?
-আসলে অনেক আগেই ব্রেনক্যান্সারটা ধরা পড়ছে।
কথাটা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
বুকের ভিরত কষ্টের নদীর পাড় ভাঙ্গতে শুরু করলে। মনে হলো গলা শুকিয়ে গেছে, কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
তারিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক চোখে।
চোখের নদীরা বাধ ভাঙ্গছে।
কি বলো তারিন!
-হুমমমম আপনাকে জানায় নি এটা! তবে এখন শেষ পযার্য়ে। পা কাপছে।
নীলাকে বেডে পাঠানো হয়েছে। চোখ দিয়ে অবরত পানি পড়ছেই।
আস্তে আস্তে নীলার কাছে গেলাম।
সুয়ে আছে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-কি ভয় পাচ্ছো? ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। এতো তারাতারি তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি না। আমি মরে গেলে অন্য কাউকে বিয়ে করবে? জ্বি না, সেটা হতে দিবো না হু।
-ওর কথাটা গুলো শুনে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
কথা বলার শক্তি নাই শুধু তাকিয়ে আছি।
আম্বুলেন্সে বসে আছি।
আমার হাত টা শক্ত করে ধরে আছে!
ওর গাল বেয়ে পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে সাথে আমারও।
একটু পর অপারেশন থ্রিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে।
আমার হাতটা তখনো শক্ত করে ধরে আছে।
অন্য হাত দিয়ে অক্সিজেনের ম্যাক্সটা খুলে আমাকে হাতের ইশরাতে কাছে ডাকলো।
তারপর কানে কানে বললো,
ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, ভালোবাসবো
বলেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
আমার গাল বেয়ে বেয়ে নীরব কান্না পানি পড়ছে।
-এই তুমি কাদছো কেন হুমমম? (নীলা)
কোন উওর দেওয়ার দেওয়ার শক্ত নেই জড়িয়ে ধরেই আছি।
-ভয় নেই মরবো না আমি মরলে তোমাকে ভালোবাসবে কে বলতো? এই দেখো আবার কাদে চোখের পানি মুছো না হলে কিন্তু...
-কি?
-বাবুর আব্বু হতে দিবো না হু!
-মানে?
-পেটে যেটা আসে ওইটার হি হি হি।
-ওর কথাটা শুনে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি। জ্ঞান ফিরে দেখি নীলা পাশে নেই।
বসে আছি।
একটু পড় সাদা কাপড়ে একটা মেয়ে বের হলো।
সাথে একটা সাদা কাপড়ে দেহ।
আস্তে আস্তে কাছে গেলাম।
মুখের সাদা কাপড়টা সরাতেই নীলার মুখটা ভেসে উঠলো।
তারিনের দিকে তাকালাম ওর চোখে পানি।
নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি।
নীলার মাথার কাছে বসলাম, তারপর আস্তে আস্তে ঝাকনি দিয়ে বললাম,
নীলা ও নীলা, এমন করে সুয়ে আছো কেন হুমমমম? এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
এই সময় কেউ ঘুমায়? উঠতো আর সুয়ে থাকতে হবে না।
একি তোমার নাকে রক্ত কেন?
নিজের চোখের কানিতে পানির ছোয়া পেলাম।
চোখটা সার্টের হাতা দিয়ে মুছলাম!
দেখো না নীলা আমি চোখের পানি মুছে ফেলেছি আর কাদছি না আমার বাবুটা কই গো?
আমাকে বাবুর আব্বু হতে দিবা না?
ওই নীলা কথা বলো না।
এই তারিন কি হলো নীলা কথা বলছে না কেন?
তারিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
শোন নীলা, আমাদের বিছানায় আর দুইটা বালিশ থাকবে না হু, তুমি আজকেই আরেকটা সরিয়ে ফেলবে। এখন উঠো তো, দেখো না আমি কাঁদছি, আমাকে বকা দিবা না?
খুব বকা খেতে ইচ্ছা করছে তো।
কি উঠবে না তো?
আচ্ছা আমিও অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করবো হু!
ওই নীলা তবুও উঠছো না?
নীলা...
জ্ঞান ফিরে দেখি আমার পাশে নীলা নাই।
সামনে তাকিয়ে দেখি চারপায় খাটিয়াতে রাখা হইছে।
মা ও মা নীলাকে এখানে কেন রাখা হইছে?
মা কোন উওর না দিয়ে আচলে মুখ ডাকলো।
কেউ কোন কথা বলছে না।
নীলাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে আরে আমার কোন কথাই শুনছে না তো এরা।
নীলাকে রেখে আসলো।
ওর কবরের পাশে বসে আছি।
কানে বাজছে,
ভয় নেই এতো তারাতারি তোমাকে ছাড়ছি না । আমি মরে গেলো আরেকটা বিয়ে করবা তাই না?
কিন্তু সেটা হতে দিবো না
ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, ভালোবাসবো💗.


Our others topics:

If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments:

Post a Comment

Thank you so much for commenting , we hope you don't face any problem . Please subscribe 🙏 ....... If you are interested to write your story or poems , please email us