Motivational love story (বেকার জীবন)
কার্ভড অংশটুকু পেরোতেই ট্রেনটা স্পীড নিল। দুলুনির সাথে সাথে বেড়ে যাওয়া গতিতে জানালার সিটে সায়কের পেতে দেয়া হাতে মাথা এলিয়ে দিল গায়ত্রী। বাইরে সন্ধ্যের আঁধার নামার প্রাক মুহুর্ত। শেষ বিকেলের আকাশটা লাল আভায় ভরে গেছে আর দিগন্তবিস্তৃত খোলা মাঠ দুদিকে, তার বুক চিরে তীব্র গতিতে হুইসিল দিতে দিতে এগিয়ে চলেছে ট্রেনখানা। রেললাইন সাধারণত রাজপথ থেকে দূরেই হয় তাই ফাঁকা মাঠ, তার বিচিত্র ভূমিরূপ, মেঠোপথে কৃষকের ফেরা আর দূরে মাথা উঁচু করে থাকা মোবাইল টাওয়ারের লাল আলো অথবা হাইটেনশন ইলেক্ট্রিকের তার বহনকারী টাওয়ার। প্রতিটি দৃশ্যই আলাদা করে সুন্দর। নগরজীবনের ব্যস্ততা ফুরোলে বা অনেকদিন পর ছুটি পেয়ে কোনও দ্রুতগতির এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায় জানালার পাশে চুপ করে বসে থাকলে মন একটু একটু করে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে থাকে নিজে থেকেই কোনওরকম মেডিটেশিন ছাড়াই।
খুব বেশী ভীড় নেই স্লিপার ক্লাসের এই কামরায়। সায়ক আর গায়ত্রী দুজনেরই লোয়ার বার্থ। ওদের আশেপাশের যাত্রীদের মধ্যে এক মধ্যবয়সী দম্পতি, একজন একা ভদ্রলোক, একটি তরুণী আর তার মা আর একটি কলেজপড়ুয়া ছাত্র। এছাড়াও আশে পাশে অনেকেই আছেন আর পাঁচটা কামরায় যেমন থাকে। সায়ক ও গায়ত্রী দুজনেই ভীষণ মিষ্টি দেখতে, গায়ত্রীর চোখমুখ যেন ছাঁচে ঢালা আর সায়কের মুখে একটা অপূর্ব হাসি লেগে থাকে সবসময়। দুজনেরই গায়ের রঙ ফর্সা। সায়কের বয়স আনুমানিক আঠাশ আর গায়ত্রী তেইশ, কিন্তু দেখে আরও কম মনে হয়। দুজনেরই পরনে ব্র্যান্ডেড জিন্স আর টিশার্ট। সায়কের হাতের লেটেস্ট আইপ্যাডে থেকে বেরোনো হেডফোনের তার দুজনের কানে গোঁজা, গায়ত্রী তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে। আর মাঝে মাঝেই দুজনে হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে একে অপরের গায়ে।
সায়কের গায়ত্রীকে আগলে রাখা দেখলেই বোঝা যায় ও ভীষণ ভালোবাসে গায়ত্রীকে। যেভাবে চোখের ওপর উড়ে আসা চুল ঠিক করে দিচ্ছিল বারবার আর কানে কানে কথা বলার বাহানায় কানের ওপরের মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছিল, তা সঙ্গে থাকা যাত্রীদের চোখ এড়ায়নি। নিজেদের নিয়ে মগ্ন থাকা দুই প্রেমিকযুগলের মধ্যে যে নিবিড়তা, তা মন ছুঁয়ে যাবে যে কারোরই। যাত্রীরা একসঙ্গে প্রায় অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলেছেন আর ট্রেনে ওঠার পর পরই সায়ক ও গায়ত্রী প্রত্যেকের সাথেই বেশ মিষ্টি ও আন্তরিক ব্যবহারই করেছে তাই পরিবেশটা বেশ হাল্কাই।
আমাদের আরও সুন্দর সুন্দর গল্প ও কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তো এখানে ক্লিক করুন
ট্রেনে যারা নিয়মত জার্নি করেন তারা জানেন প্রতিটি সফরেই নির্দিষ্ট কিছু প্যাটার্ণের লোক দেখতে পাওয়া যায়। এখনকার জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা একটা সিট পেলেই কানে হেডফোন গুঁজে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেয়, একদল লোক ডেসিবেলের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মধ্যে বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেন, একদল লোক সুযোগ পেলেই দক্ষিণ ভারতের চিকিৎসা বা কোথায় কোথায় ট্যুরে গেছেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেন, একদল সবার গন্তব্য জিজ্ঞেস করেন আর কেউ কেউ হন সর্বজ্ঞানী। এই সর্বজ্ঞানীরা আবার মোটামুটি সব বিষয়েই এক্সপার্ট, ট্রাম্প থেকে তেঁতুলতলা পর্যন্ত। আর কেউ কেউ থাকেন হিউম্যান নেটওয়ার্ক। কারো বাড়ী কোথায় জানতে পারলে যতক্ষন না একজন মিউচুয়াল পরিচিত কাউকে এরা খুঁজে বের করতে পারছেন, ততক্ষন শান্তি পান না। কেউ কেউ আছে কানে হেডফোন গুঁজে চুপ করে বসে থাকেন মিউজিক না চালিয়ে, মুখের ভাব দেখে মনে হয় গান শুনছেন, কিন্তু আদতে বাকীদের আলোচনা শোনেন।
এরকম বিচিত্র মানুষের সমাগম ঘটে রেলগাড়ীতে। যাঁদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ভালো বা মনস্ত্বত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ রয়েছে তাঁরা অনেক রসদ পাবেন রেলযাত্রায়। যাইহোক গায়ত্রী সায়কের কানে কানে কিছু একটা বলল। উত্তরে সায়ক বলল, “আমি সঙ্গে যাবো?” গায়ত্রী মাথা নেড়ে না বলে উঠে গেল। সায়কে হাত ধরে ওকে সিট পার করিয়ে দিল। গায়ত্রী বাথরুমের দিকে গেল।
সায়ক সিটে এসে বসে আইপ্যাডে মন দিল। কিছুক্ষণ উসখুস করার পর মধ্যবয়সী দম্পতির ভদ্রমহিলা বলে বসলেন, “ভাই মনে হয় বউমাকে খুব ভালোবাসে। ”
চোখ না সরিয়েই সায়ক আপনমনেই বলে বসল, “কি করব দিদি, একে বয়সে বড় তায় মা লক্ষ্ণী!”
বাজ পড়ার মত সবাই ওর দিকে তাকাল। হঠাত নিস্তব্ধতায় সায়ক বুঝতে পারল মুখ ফস্কে বলে ফেলেছে কথাটা। সবকটা চোখ তখন ওর দিকে তাকিয়ে। ছেলে বলে কি? এত কমবয়সী মেয়েটা ওর চেয়ে বয়সে বড়? সায়কের তখন হতবুদ্ধি অবস্থা। আসলে মনটা আইপ্যাডেই ছিল তাই বলে ফেলেছে কথাটা এবং বেশ জোরেই বলেছে, এখন ফেরত নেবারও উপায় নেই। তাই চুপ করেই রইল।
“ব্যাপারটা বুঝলাম না ঠিক”, মধ্যবয়সী ভদ্রলোক বললেন। “তোমার সঙ্গিনী তোমার চেয়ে বড়? কিন্তু দেখে তো উলটো মনে হয়।”
“এ ব্যাপারে কথা বলা মনে হয় ঠিক হবেনা। গায়ত্রী শুনলে রাগারাগি করবে। প্লিজ আপনারা ওকে কিছু বলবেন না এব্যাপারে।”,সায়ক বলল।
ওদের আশেপাশের লোকেদের চোখেমুখে তখন বিস্ময়ের ভাব। সবচেয়ে উসখুস করছে মায়ের সঙ্গে থাকা তরুণী। একটা সুন্দরী মেয়ের সবচেয়ে বড় শত্রু অপর এক সুন্দরী হয়। তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তখনই গড়ে ওঠে যদি তাদের বয়ফ্রেন্ড বা স্বামী এক ব্যক্তিই হয়। তাও সেটা ভালবেসে নয়, সেই কেষ্টঠাকুরকে যৌথ উদ্যোগে পেটানোর উদ্দ্যেশে। সেই তরুণী মেয়েটি এবার বলে বসল, “যদি সত্যিই উনি আপনার চেয়ে বয়সে বড় হন, তবে প্লিজ আমাকে এই রূপের রহস্য জানাতে বলবেন দয়া করে। ”
সায়ক কিছু বলার আগেই গায়ত্রী এসে হাজির। সবকটা চোখই তখন ওর দিকে। এসেই আবহাওয়ার পরিবর্তনটা ঠিক ধরে ফেলল ও। সায়কের দিকে তাকিয়ে বলল, “এনিথিং রং?”
সায়কের চোখে তখন অপরাধীর দৃষ্টি। ভ্রূ উঁচিয়ে কি হয়েছে জানতে চাইল গায়ত্রী।
“বোসো মা তুমি” বললেন সেই তরুণীর মা। “তুমি প্লিজ ওকে কিছু বলোনা, বেচারী অলরেডি ভয়ে কুঁকড়ে আছে। ”
“কিন্তু কি হয়েছে সায়ক? সেটা তো বলবে?”, জিজ্ঞেস করল সায়ক কে।
“আপনি নাকি ওনার থেকে বড়, উনি বলে ফেলেছেন এ কথাটা”, বলল সেই তরুণী।
রাগের আভাস ফুটে উঠল গায়ত্রীর চোখেমুখে। “ঠোঁটদুটো বন্ধ রাখতে পারোনা তুমি তাইনা?” সিটে বসতে বসতে বলল।
“স্যরি”, ফিসফিস করে বলল সায়ক। গায়ত্রী কোনও উত্তর না দিয়ে জানালার বাইরে তকিয়ে রইল। পরিবেশ তখন থমথমে। শেষে সেই মাঝবয়সী দম্পতির ভদ্রমহিলা বললেন, “কিছু মনে করোনা বোন, ভাইয়ের কোনও দোষ নেই, ও তখন অন্য কাজ করছিল। আসলে তোমাদের মধ্যের এই ভালোবাসা দেখে আমিই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিলাম। তুমি রাগ করোনা। আমার জন্য তোমাদের মধ্যে ঝামেলা হলে আমার খারাপ লাগবে। ”
“ইটস ওকে দিদি। তবে এটা প্রথমবার না। আমি জানি ও আমাকে ভীষণ ভালবাসে, আমিও বাসি। কিন্তু কথা চেপে রাখতে পারেনা। ”, বলল গায়ত্রী।
একটু থেমে সায়ককে বলল, “বলেই যখন ফেলেছ তো পুরোটাই বলো। ”
একমুহুর্ত গায়ত্রীর দিকে তাকাল সায়ক। রাগ কমেছে দেখে উৎসাহ পেল একটু।
(দুই)
গল্প শুনতে কে না ভালোবাসে? আর সে গল্পে যদি রহস্যের গন্ধ থাকে তবে তো কথাই নেই। সকলেই গ্যাঁট হয়ে বসল গল্প শোনার জন্য। এমনকি সেই কলেজপড়ুয়া তরুণও কান থেকে হেডফোন খুলে তাকিয়ে রইল। শুরু করল সায়ক-
“প্রথমেই বলে রাখি আপনাদের যা বলতে চলেছি তা শুনলে প্রথমেই আপনাদের গালগল্প মনে হবে। অবিশ্বাসও করতে পারেন। কিন্তু আমি আপনাদের যা বলছি তার একবিন্দুও মিথ্যে নয়। প্রথমেই একটা জিনিস বলে রাখি, যে জিনিস আমাদের ব্যাখার মধ্যে আসেনা বা আমাদের যে জ্ঞান উপলব্ধ হয়নি, তা মিথ্যে এমনটা ভাবা একদমই উচিৎ নয়। এই গল্পের সূত্র হবার আগে এর পেছনের অতীতটা জানতে হবে। আর আপনাদের মনে অনেক প্রশ্নও জন্মাবে, কিন্তু সব প্রশ্ন জমিয়ে রাখবেন। শেষে সবার উত্তর দেব। ”
“তখন সবে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিলাম না তাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারিনি কিন্তু বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক চিরদিনই ছিল আমার। যাইহোক এসএসসি দিয়ে স্কুলমাস্টার হবার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু পরিবর্তনের ঠ্যালায় সে স্বপ্ন পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম। বাড়িতে তখন চরম অর্থাভাব। দুবেলা খাওয়াই জোটেনা প্রায়। সারাদিন বাপ মায়ের ঝামটা খাই আর টিউশন পড়াই বাড়ী বাড়ী গিয়ে, সন্ধ্যেবেলা পাড়ার ক্লাবে ক্যারম পেটাই আর ফেসবুক করি। কিন্তু একমাত্র আনন্দ পাই পড়াশোনায়। বিশেষত বিজ্ঞান নিয়ে। এই সূত্রেই গায়ত্রীর সাথে পরিচয়।”
এমন সময় এক ঝালমুড়িওয়ালা ‘ঝালমুড়ি, ঝালমুড়ি’ করতে করতে এগিয়ে এলো। সায়ক সবাইকে ঝালমুড়ি অফার করল। দু একজন আপত্তি জানাতে গায়ত্রী বলল, “নিন না, পরের মাসে আমরা বিয়ে করছি। ট্রেন থেকে নামলেই তো চির অচেনা। তাই চাইলেও তো বিয়েতে নেমন্তন্ন করতে পারবনা। আপাতত ঝালমুড়িতেই আশীর্বাদ করুন না হয়। ” সবাই হো হো করে হেসে উঠল ওর কথায়। সুন্দরী মেয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান কজনই বা করতে পারে? বাইরে তখন সন্ধ্যা ঘন হয়ে এসেছে। দূরে আলো ফুটে উঠেছে বিভিন্ন গ্রামের। ট্রেনটারও স্পীড কমেছে কিছুটা। খেতে খেতেই শুরু করল সায়ক আবার।
“এরকম যখন দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছি তখন হঠাতই প্ল্যান হল বন্ধুরা মিলে সিকিম যাওয়া হবে। বাড়ীর গালাগাল থেকে মুক্তি পেতে চাইছিলাম আমিও। তাই দলবল নিয়ে এককথায় রাজী হলাম। তখন স্কুলগুলোও ছুটি ছিল তাই সপ্তাহখানেকের জন্য টিউশন বন্ধ করে সবাই মিলে চললাম সিকিমের দিকে। বন্ধুরা গেলে যা হয় আর কি।!প্রচুর ঘোরাফেরা,মদ্যপান এসব চলতে লাগল। এরমধ্যেই একদিন ছাঙ্গু লেক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার মত উত্তরে এক নির্জন জায়গায় গেলাম আমরা। সেখানে সেরকম লোকজন ছিলনা, কিন্তু একটু দূরেই এক ভদ্রলোককে দেখলাম একদৃষ্টে চেয়ে আছেন আকাশের দিকে। যেন গভীর কোনও চিন্তায় মগ্ন। ”
“ভদ্রলোকের বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ হবে। ফর্সা গায়ের রঙ, মুখে বুদ্ধির ছাপ স্পষ্ট, পরনে চশমা আর অতি সাধারণ জামা প্যান্ট। কিন্তু ভদ্রলোকের মধ্যে অসম্ভব এক ব্যক্ত্বিত্ব ছিল যা তাঁর প্রতি সম্ভ্রমের উদ্রেক করে। খুব ইচ্ছে করছিল তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে। কাছে গিয়ে ‘হ্যালো’ বলতেই উনি ঘুরে তাকালেন। তাকিয়ে বললেন, ‘আমি বাংলা জানি ও বুঝি। তুমি তো বাঙালি তাই বাংলাতেই বলো। ’ কথায় কথায় জানলাম উনি একজন সন্ন্যাসী। একটু অবিশ্বাস হল, কিন্তু পরে ওনার যা পরিচয় জানলাম তাতে শ্রদ্ধায় মাথা এমনিতেই নত হয়ে এলো। ”
কথাটা বলে সায়ক একটু থামল। মনে হল ভেতরে শব্দগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। ভালো গল্প কথকের সবচেয়ে বড় গুণ হলো স্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধের মত বেঁধে রাখতে পারা। সায়কের মধ্যে সে গুণ পরিপূর্ণভাবেই আছে। সবাই তখন কথা শুনতে উদগ্রীব। এমনকি আপার বার্থের সেই কলেজপড়ুয়া তরুণও হাঁ করে শুনছে। আশে পাশে উপস্থিত সবাই তখন সায়কের দিকে তাকিয়ে। এমনকি সেই ঝালমুড়ি ওয়ালা নিজেও মুড়ির টিন নামিয়ে রেখে শুনছে। আর গায়ত্রী তখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে।
“ভদ্রলোক ইসরোর প্রপেলশন ল্যাব এ ছিলেন। চন্দ্রায়ণ ও মঙ্গলযান মিশনে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলযান লঞ্চ হবার কদিন পরেই সব ছেড়েছুড়ে সন্ন্যাসী হয়ে যান। কেন হয়েছেন তা তিনি বলেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘এই পৃথিবীতে আমরা ভীষণভাবে নিয়ন্ত্রিত, এবং সেটা স্রষ্টার কাছে নয়, মানুষের কাছে। এমন মানুষ যাদের আমরা চিনিই না, জানিই না। তাই মনে হলো একবার আমরা স্রষ্টার কাছে নিয়ন্ত্রিত হই। ’ কথাটার মানে আমি তখন বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝি।
কথাটা বলেই তিনি উঠে চলতে শুরু করেন, অনেকটা দূর এগিয়েও যান,কিন্তু আবার ফিরে আসেন। হঠাতই বলেন, ‘তোমার জীবনে কিছু ঘটতে চলেছে সায়ক। কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমায়। তাকে রক্ষা করো, অযত্ন করোনা। ’ বলেই তিনি হনহন করে চলে যান। হঠাতই আমার বন্ধুরা ডাক দেয় পেছন থেকে। আশ্চর্যজনকভাবে ওরা নাকি ওনাকে দেখেইনি। হতভম্বতায় আমিও ওনার নাম জিজ্ঞেস করিনি। ”
“এরপর আমরা চলে আসি কলকাতায়, আবার সেই পুরোনো জীবন। এসে ভদ্রলোকের সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করি, কিন্তু ইসরোর বেশীরভাগ ফাইলই ‘ক্লাসিফায়েড’ পর্যায়ের, আর আমি অতীব সাধারণ নাগরিক তাই বেশীদূর এগোতে পারিনি, কিন্তু এর মধ্যে একদিন সস্তায় আইফোন কেনার চক্করে ডার্ক ওয়েব এ ঢুকে পড়ি, একটা নতুন দিগন্ত খুলে যায়। সেখানেই একটা সায়েন্স ফোরামের সিক্রেট গ্রুপের সঙ্গে পরিচয় হয়, যেখানে আমি পরিচিত হই গায়ত্রীর সাথে। বাকীটা আপনারা ওর মুখেই শুনুন। ”
(তিন)
“তুমিই বলো না” বলল গায়ত্রী। সায়ক রাজী হল না। বলল, “এরপর গল্পটা তোমারই। তুমিই বলো। ” গায়ত্রী বলা শুরু করল, “আমাকে বাঙালী মনে হলেও আমি বাঙালী নই। আমার জন্ম রাজস্থানের এক রাজপরিবারে ১৯৩২ সালে। আমার নাম গায়ত্রী চৌহান। পৃথ্বীরাজ চৌহানের সাথে আমাদের বংশ লিঙ্কড বলে মনে করা হয়। ”
সবার চোখে তখন বিস্ময়ের ছাপ, একটা হলিউড সিনেমার স্ক্রিপ্ট চলছে যেন চোখের সামনে। অবিশ্বাস সবার চোখেমুখে। বিষয়টা আঁচ করে গায়ত্রী বলল, “আমার একটা আসল নাম ছিল, সেটা বলছিনা। কিন্তু আপনাদের বয়সের ব্যাপারটা বলার আগে সেটা বলি যে কারণে সেদিন সেই ভদ্রলোক সায়ককে বলেছিলেন আমরা মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, ইশ্বরের নয়। ”
“আপনারা কেউ কি বিশ্বাস করবেন যে পৃথিবীর কয়েকটি কুখ্যাত মারণরোগ মানুষেরই তৈরী, বিবর্তনের ইতিহাসে এসব রোগের কোনও ঐতিহাসিক উল্লেখ নেই, কিন্তু রাতারাতি কোথা থেকে এগুলোর উদয় হয়ে লাখো লাখো মানুষকে মেরে ফেলে। আবার এসবের অ্যান্টিডোটও বাজারে আসে, তারপর সেটা কোটি কোটি টাকা তুলে দেয় বড় কোনও কর্পোরেট হাউসের ঘরে। তারপর আবার একটা নতুন অসুখ, আবার মৃত্যু, আবার ওষুধ। এ চক্র চলতেই থাকে অনন্তকাল ধরে। ”
“এর মধ্যেও অনেক তর্কবিতর্ক আছে, সেসবে যাচ্ছিনা। এবার আপনাদের বলি,আপনার কেউ ড্যান ব্রাউন পড়েছেন?” প্রত্যাশিতভাবেই সেই কলেজপড়ুয়া ছাড়া আর কেউ পড়েনি বলেই জানা গেল। গায়ত্রী বলতে লাগল, “ড্যান ব্রাউন তাঁর দুটো বই ‘দ্য ডা ভিঞ্চি কোড’ ও ‘দ্য লস্ট সিম্বল’ বইতে দুটো সিক্রেট সোসাইটির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হল ‘ইলুমিনাতি’ আর দ্বিতীয়টি ‘ফ্রিম্যাসনারি’। এদের মধ্যে ইলুমিনাতির জন্ম ইউরোপে রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ১৭৭৬ সালে আর ফ্রিম্যাসনারি অনেকটা লম্বা সময় ধরে তৈরী হলেও মনে করা হয় ১৭১৭ সালে এর জন্ম। এছাড়া আরও অজস্র সংস্থা রয়েছে এরকম। কিন্তু মনে করা হয়, পৃথিবীর মূল নিয়ন্ত্রক শক্তি এরাই। কারণ এদের অধীনেই কাজ করে রথসচাইল্ড পরিবার। এদের সম্পর্কে একটাই কথা বলা যায় যে পৃথিবীর সবকটা প্রধান ব্যাঙ্কের মাথায় এরাই বসে আছে। আর এই পরিবারের অন্যতম বড় সেনাপতির নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বলা ভাল সিআইএ। এরা এতটাই শক্তিশালী যে দরকারে নিজের প্রেসিডেন্টকে খুন করতেও এরা দুবার ভাবেনা। জন এফ কেনেডির হত্যা তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ”
এমন সময় সেই একা ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, “কিন্তু এর সাথে আপনার বয়সের কি সম্পর্ক?”
“সম্পর্ক আছে। ”, স্মিতভাবে হেসে বলল, গায়ত্রী। “পৃথিবীতে আমরা ভাবি গণতন্ত্রে আমরা অংশ, কিন্তু আসলে তা নয়। বিজ্ঞান, অর্থ এমনকি প্রকৃতিও নিয়ন্ত্রিত হয় মুষ্টিমেয় কিছু লোকের দ্বারা। এবং এটা আজ থেকে নয়, মানবসভ্যতা সৃষ্টির সময় থেকেই। আর আমার বয়সকে ধরে রাখার যে ক্ষমতা, তা এই এই নিয়ন্ত্রণেরই একটা অংশ। ”
“একটা সিক্রেট সোসাইটি বা গুপ্ত সংগঠনের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হল নিজেদের গোপন রাখতে পারার ক্ষমতা। সেই অর্থে ইলুমিনাতি বা ফ্রিম্যাসনারি ততটা গুপ্ত নয় কারণ এদের ব্যাপারে অনেকেই জানে। ডার্ক ওয়েবে প্রচুর তথ্য আছে এ নিয়ে। কিন্তু সকলে যেটা জানেনা সেটা হল, প্রথম এই ধরনের গুপ্ত সংগঠনের জন্ম কিন্তু আমাদের দেশে। ”
সবাই অবাক হয়ে গেল। সবার মধ্যে চাঞ্চল্য আর হাজার প্রশ্ন। এরপর সায়ক বলতে শুরু করল, “ভারত তথা পৃথিবীর ইতিহাসের এক মহান সম্রাট অশোক, পিতামহ চন্দ্রগুপ্তের ধারা বজায় রেখে মৌর্য সাম্রাজ্যের সীমানা বাড়াতে উদ্যোগী হন। এই পথে তার একমাত্র বাধা ছিল কলিঙ্গ। বর্তমানে যাকে আমরা উড়িষ্যা নামে চিনি। এরপরের ঘটনা আপনারা সবাই ইতিহাস বইয়ে পড়েছেন। ২৬১ খ্রীষ্ট পূর্বে ঘটা কলিঙ্গ যুদ্ধের রক্তক্ষয়, অশোকের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ এবং চন্ডাশোকের ধর্মাশোকে পরিণত হওয়া। ”
“যেটা আমরা ইতিহাসে পড়িনা সেটা হল এরপর অশোক ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন মানবসভ্যতার ভবিষ্যত নিয়ে। উপলব্ধি করেন কোনও সভ্যতার একমাত্র ভাগ্যনিয়ন্ত্রক হল জ্ঞান, তা যে বিষয়েরই হোক না কেন। এরপর ২৭০ খ্রীষ্টপূর্বে তিনি ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে একটি গুপ্তসংগঠন তৈরী করেন – যার আক্ষরিক নাম ছিল ‘নয়জন অজানা মানুষ’। এই নয় ব্যক্তি নয়টি বিশেষ শাস্ত্র নিয়ে গবেষণা ও তা রক্ষা করার দায়িত্ব পান – সাইকোলজি, ফিজিওলজি, মাইক্রোবায়োলজি, অ্যালকেমি, কমিউনিকেশন, গ্র্যাভিটি, কসমোলজি, লাইট, সোশিওলজি।
এই বিষয়গুলির ওপর পাওয়া জ্ঞান ও তথ্যকে লিপিবদ্ধ করেন ও সাধারণের নাগালের বাইরে সেই তথ্য সংরক্ষন করতে থাকেন কারণ অযোগ্যের হাতে বিজ্ঞান সবসময়ই ভয়ঙ্কর পরিণাম নিয়ে আসে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল যে সেই সময়েও অশোক এই বিষয়কে বংশপরম্পরায় রক্ষা করার ব্যবস্থা করেননি, বরং সেই নয় ব্যক্তিকেই নিজের উত্তরসূরী খোঁজার ব্যবস্থা করতে হতো। বিষয়টি এতটাই গোপন ছিল যে, যেই নয় ব্যক্তি নিজের স্ত্রী বা স্বামীকেও বলতে পারতেন না সে কথা। ”
“মেয়েরাও এই নয় ব্যক্তির অংশ হতে পারতেন?”, জিজ্ঞেস করল সেই তরুণী।
“কেন নয়?”,উত্তর দিল গায়ত্রী। “এই সোসাইটির অংশ হতে গেলে অন্যতম শর্তই ছিল যোগ্যতা। এখানে নারী, পুরুষ, জাতি এসব কিছুই দেখা হত না। এমনকি ভারতীয় নন এমন ব্যক্তিরাও এর অংশ হতে পারতেন। ”
“মনে করা হয়, বর্তমান মার্শাল আট, জুডো এসবই ফিজিওলজির বই থেকে পাওয়া কিছু লিকেজ। সাইকোলজির মূল উদ্দেশ্যই ছিল জনমতকে প্রভাবিত করা। আজকের মিডিয়া বা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যেটা ব্যাপকভাবে করে। আমরা কিন্তু বর্তমানে কোনও ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে দিই আর ফেসবুকে মন্তব্য করে বসি। কারণ পরোক্ষে কোথাও আমরা প্রোপাগান্ডা দ্বারা প্রভাবিত হই।”, বলল সায়ক।
“মানবসভ্যতার কোনও ধারণাই নেই কি বিপুল পরিমাণ জ্ঞান সঞ্চিত আছে সেই বইগুলিতে। এ ব্যাপারে আরও জানতে চাইলে ১৯২৩ সালে ট্যালবট মান্ডি’র লেখা ‘দ্য নাইন আননোন’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন। উনিই প্রথম এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। ”, বলল সায়ক।
“এবার আসি আমার বয়সের ব্যাপারে। কোনও কারণে বা কোনওভাবে চৌহান বংশের কোনও এক নারী এই সংগঠনের নয়জনের একজনের সংস্পর্শে আসতে পেরেছিলেন। সেই ব্যক্তির বিষয় ছিল ফিজিওলজি। অত্যন্ত ভালোবাসার খাতিরে তিনি তাঁর স্ত্রীকে মৃত্যুমুখ থেকে বাঁচিয়ে তোলেন। যদিও এ কারণে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়, কিন্তু সেই নারী নিজের অজান্তেই শরীরে পরিবর্তিত ডিএনএ বহন করতে থাকেন। এরপর চৌহান বংশের মেয়েদের শরীরেই একমাত্র এই ডিএনএ প্রবাহিত হয়। অজ্ঞাত কারণে কোনও ছেলে এতটা দীর্ঘায়ু হয়না যতটা মেয়েরা হয়। কিন্তু সব মেয়ে নয়। কেউ কেউ যার সাথে সেই প্রথম মহিলার ডিএনএ সবচেয়ে বেশী ম্যাচ করে। ”
“তার ,মানে আপনি অমর?”, বলে উঠল সেই কলেজপড়ুয়া।
মৃদু হাসল সায়ক। বলল,“অমরত্বের চেয়ে বড় অভিশাপ কিছু নেই ভাই। আর অমরত্ব সম্ভবও না। একটা জিনিস কি জানো? মৃত্যু বা বয়স হয়ে যাওয়া একধরনের জেনেটিক ডিসঅর্ডার। আমাদের কোষগুলোর মরে যাওয়া বা নতুন কোষ উতপাদন না হওয়ার পরিমাণ বার্ধক্য ও মৃত্যু। এটা প্রকৃতির ডিজাইন করা। অনেকটা মানুষের গালে টোল খাওয়ার মত। গালে টোল পড়া ছেলে বা মেয়েদের সুন্দর বলেই মনে করা হয়। কিন্তু আসলে তা মাতৃগর্ভে গালের মাংশপেশী ঠিকমত গঠন না হওয়ার জন্য হয়। কিন্তু যেহেতু দেখতে সুন্দর লাগে তাই এই ত্রুটিকে আমরা সানন্দে গ্রহণ করেছি। আর বাকি ত্রুটিগুলোকে নয়। ”
“মৃত্যু অবধারিত। আমিও অমর নই। কিন্তু কোনও কারণে মিউটেশনের ফলে আমার শরীরে কোষের কার্যক্ষমতা অনেক বেশী। তাই এতদিন বেঁচে আছি, এই বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় কষ্ট হল প্রিয়জনকে হারাতে হয়, আগেও হারিয়েছি, জানি সায়ককেও হারাব। মিউটেশন মার্ভেলের সিনেমার মত নয় ভাই, বরং অনেক বেশী সাধারণ। ”
গলা ভারী হয়ে এল গায়ত্রীর। ছলছল করে উঠল চোখ। সায়ক বুকে টেনে নিল ওকে। বাইরে তখন ঘন আঁধার নেমেছে। সবাই চুপ। প্রায় অর্ধেক কামরার মনেই হাজার প্রশ্ন। কিন্তু কেউই কিছু জিজ্ঞেস করছেনা। সায়ক কফির ফ্লাক্স বের করল। মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করল কফি দিতে সবাইকে। একটা ফেরিওয়ালার কাছথেকে অনেকগুলো কফির কাপ জোগাড় করা হল। সবাই কফির কাপ টেনে নিল নিঃশব্দে। একটা অদ্ভুত স্থিরতা ছড়িয়ে গেল চারদিকে।
(চার)
পরদিন সকালে অর্ধেক কামরার যখন ঘুম ভাঙল, তখন সকলেই হাসপাতালে। বিড়বিড় করে শুনতে পেল ডাক্তার আর নার্সের বিরক্তমাখা গলা, “কতবার রেলওয়ে প্রচার করে অচেনা লোকের কাছে কিছু খাবেন না, কিন্তু কে শোনে কার কথা। খাবে আর আধমরা হয়ে আসবে। ”
রেলপুলিশ তখন হন্যে হয়ে খুঁজছে সায়ক আর গায়ত্রীকে। কফিতে কিছু মিশিয়ে খাওয়ানোর পর যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে পালিয়েছে ওরা। পুলিশ মনে করছে সেই ফেরিওয়ালাও জড়িত এদের সাথে। এই চক্রের সঙ্গে কারা জড়িত তা জানার আপ্রাণ চেষ্টা করছে পুলিশ। সাম্প্রতিক কালে এতগুলো লোক একসঙ্গে এভাবে এরকম ঘটনার শিকার হয়নি।
“এইইইই, একটু কন্ডিশনার লাগিয়ে দাওনা গো। ”, আদুরে গলায় বলল গায়ত্রী ওরফে চিত্রা ঘোষ। পিএইচ.ডি ইন মাইক্রোবায়োলজি। কন্ডিশনার নিয়ে বাথরুমে ঢুকল সায়ক দত্ত ওরফে অভিমুন্য চৌধুরী। পিএইচ.ডি ইন এন্সিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি।
“যাই বলো তোমার গল্প বলার ভঙ্গী দারুণ। আমি নিজেই হাঁ করে শুনি” বলল চিত্রা।
“থ্যাংক ইউ, মাই লাভ”, বলে চিত্রার খোলা পিঠে চুমু খেল অভিমুন্য।
“কিন্তু খারাপ লাগছে গো সেই দিদি আর ওনার হাজব্যান্ডের জন্য। ডোজটা কড়া হয়নি তো?”,বলল চিত্রা।
“আরে না, হার্টের অসুখ না থাকলে সবাই দু এক দিনে ঠিক হয়ে যাবে। ”, বলল অভিমুন্য।
প্রাইমারীর ফর্ম তোলার দিনই রোদে লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়ানো চিত্রার সাথে বন্ধুত্ব হয় অভিমুন্যর। দুজনেই পিএইচ.ডি কিন্তু ডোমের চাকরীর চেয়ে প্রাইমারী ভালো। এরপরে কবছরে পশ্চিমবঙ্গে বেকার যুবকযুবতীদের অবস্থা সারা ভারত জানে। কেউ চপ ভাজায়, কেউ পকোড়া।
“রাষ্ট্র যদি কাজের ব্যবস্থা করতে না পারে তবে আমাদের অসহায়ত্বের ভাগ রাষ্ট্রকেও নিতে হবে চিত্রা। ” চিকিৎসার অভাবে মা মারা যাবার পর সব বইপত্র পোড়াতে পোড়াতে বলেছিল অভিমুন্য। টিউশন পড়াতে গিয়ে অপরূপা সুন্দরী চিত্রাকেও অনেকের কুনজরে পড়তে হয়েছে। অথচ মামা, কাকা আর নেতাকে ঘুষ দিয়ে অনেকেই ড্যাং ড্যাং করে চাকরী করে বেড়াচ্ছে। তখনই ওরা ঠিক করে নেয় আর যাই করুক চপ ভাজবেনা। শিক্ষিত মানুষ যখন অপরাধে নামে তখন পরিণাম ভয়ঙ্করই হয়। রেলে যাত্রীদের বেঁহুশ করার মাধ্যমে অপরাধে হাত পাকানো শুরু করেছে দুজন। কিন্তু আসল লক্ষ্য অন্য। অনেক বড় সে লক্ষ্য।
“জ্ঞান আর সৌন্দর্যের অপপ্রয়োগ খুব বিপজ্জনক চিত্রা। ট্রেনযাত্রীদের অনেকেই জানে অচেনা লোকের হাতে খেতে নেই। কিন্তু আমাদের চেহারা, স্মার্টনেস আর প্রেজেন্টেশনের দৌলতে কেউ বুঝতেই পারেনি যে তোমার বাথরুমে উঠে যাওয়া, আমার মুখ ফস্কে বলে ফেলার অভিনয় আর তোমার রাগ – সবটাই একটা বড় নাটকের অংশ। একটা আষাঢ়ে গল্প স্রেফ প্রেজেন্টেশনের দৌলতে উতরে গেল। সবসময় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে ব্যবহার করবে। প্ল্যান বি বলে কিছু হয়না, ওটা পরিস্থিতি অনুযায়ী তৈরী করে নিতে হয়.....এই ঘুমোলে নাকি?”
ততক্ষণে চিত্রা ঘুমিয়ে পড়েছে সায়কের বুকে। “পাগলী একটা” মনে মনে বলে, কোলে ঘুমন্ত চিত্রার কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে ভিনরাজ্যের এক অখ্যাত হোটেলের বিছানায় বসে আইপ্যাড অন করল অভিমুন্য, নিজের সিক্রেট সোসাইটিতে নতুন সদস্য ঢোকানোর জন্য।
(সমাপ্ত)
0 Comments
Thank you so much for commenting , we hope you don't face any problem . Please subscribe 🙏 ....... If you are interested to write your story or poems , please email us